২০২৫ সালের ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেট: বিশদ পর্যালোচনা
২০২৫-২৬ অর্থবছরের ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটের সংক্ষিপ্তসার
ভারতের অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারামন সংসদে ২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন। এই বাজেটের মাধ্যমে ভারতকে আরও সমৃদ্ধ ও বিশ্বমঞ্চে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে "বিকশিত ভারত" (Viksit Bharat) গঠনের দিকে অগ্রসর হবে।
অর্থমন্ত্রী তেলেগু কবি ও নাট্যকার শ্রী গুরজাদা আপ্পা রাওয়ের বিখ্যাত উক্তি উদ্ধৃত করেছেন:
"একটি দেশ শুধু তার মাটি নয়; একটি দেশ তার জনগণ।"
এই ভাবনাকে কেন্দ্র করেই বাজেট ২০২৫-২৬-এর মূল থিম নির্ধারণ করা হয়েছে "সবকা বিকাশ", যা সমগ্র অঞ্চলের সামগ্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নে সহায়তা করবে।
"বিকশিত ভারত"-এর মূল নীতিগুলি
১. শূন্য-দারিদ্র্য (Zero-Poverty)।
২. ১০০% গুণগত মানসম্পন্ন স্কুল শিক্ষা।
৩. উচ্চমানের, সাশ্রয়ী ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা।
4. ১০০% দক্ষ শ্রমিক ও অর্থবহ কর্মসংস্থান।
৫. মহিলাদের ৭০% অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ।
৬. কৃষকদের মাধ্যমে ভারতকে "বিশ্বের খাদ্য ঝুড়ি" হিসেবে গড়ে তোলা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অনুমান (Budget Estimates)
- মোট রাজস্ব (ঋণ ব্যতীত): ₹৩৪.৯৬ লক্ষ কোটি।
- মোট ব্যয়: ₹৫০.৬৫ লক্ষ কোটি।
- নেট কর রাজস্ব: ₹২৮.৩৭ লক্ষ কোটি।
- রাজকোষ ঘাটতি: জিডিপির ৪.৪%।
- মোট বাজার ঋণ গ্রহণ: ₹১৪.৮২ লক্ষ কোটি।
- মূলধনী ব্যয়: ₹১১.২১ লক্ষ কোটি (জিডিপির ৩.১%)।
উন্নয়নের প্রথম ইঞ্জিন: কৃষি খাত
প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি যোজনা।
গ্রামীণ সমৃদ্ধি ও স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা।
ডালে আত্মনির্ভরতা (Aatmanirbharta in Pulses)।
সবজি ও ফল চাষের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি।
বিহারে মাখানা বোর্ড গঠন।
উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদনের জন্য জাতীয় মিশন।
কটন উৎপাদন বৃদ্ধির মিশন।
কৃষকদের জন্য কিসান ক্রেডিট কার্ডের (KCC) মাধ্যমে ঋণ সুবিধা।
আসামে নতুন ইউরিয়া কারখানা।
উন্নয়নের দ্বিতীয় ইঞ্জিন: MSME খাত
MSME-র নতুন শ্রেণিবিন্যাস।
ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ক্রেডিট কার্ড সুবিধা।
স্টার্টআপের জন্য ফান্ড অফ ফান্ডস।
প্রথমবারের উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ প্রকল্প।
চামড়া ও জুতা শিল্পের জন্য "ফোকাস প্রোডাক্ট স্কিম"।
খেলনা শিল্পের জন্য নতুন নীতিমালা।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সহায়তা।
"মেক ইন ইন্ডিয়া"-কে আরও শক্তিশালী করতে নতুন উৎপাদন মিশন।
উন্নয়নের তৃতীয় ইঞ্জিন: বিনিয়োগ
মানুষের মধ্যে বিনিয়োগ
সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ি (Saksham Anganwadi) ও পুষ্টি ২.০।
আটল টিঙ্কারিং ল্যাবস।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ব্রডব্যান্ড সংযোগ।
ভারতীয় ভাষার জন্য "ভারতীয় ভাষা পুস্তক" প্রকল্প।
দক্ষতা উন্নয়নের জন্য জাতীয় উৎকর্ষ কেন্দ্র (National Centres of Excellence for Skilling)।
IIT-গুলোর সম্প্রসারণ।
শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য উৎকর্ষ কেন্দ্র।
চিকিৎসা শিক্ষার সম্প্রসারণ।
প্রত্যেক জেলা হাসপাতালে ডে কেয়ার ক্যান্সার কেন্দ্র।
শহুরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
PM SVANidhi প্রকল্প।
অনলাইন কর্মীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প।
অর্থনীতিতে বিনিয়োগ
পরিকাঠামোতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP)।
রাজ্যগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা।
২০২৫-৩০ সালের সম্পদ নগদীকরণ পরিকল্পনা।
জল জীবন মিশন।
নগর উন্নয়নের জন্য "আরবান চ্যালেঞ্জ ফান্ড"।
"বিকশিত ভারত" লক্ষ্যে পারমাণবিক শক্তি মিশন।
জাহাজ নির্মাণ ও সামুদ্রিক উন্নয়ন তহবিল।
UDAN - আঞ্চলিক বিমান সংযোগ প্রকল্প।
বিহারে নতুন গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর।
মিথিলাঞ্চলের পশ্চিম কোশী খাল প্রকল্প।
খনি খাতে সংস্কার।
SWAMIH ফান্ড ২।
পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
উন্নয়নের চতুর্থ ইঞ্জিন: রপ্তানি খাত
রপ্তানি প্রচার মিশন।
ভারতট্রেডনেট (BharatTradeNet)।
গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (GCC) গঠনের জন্য জাতীয় কাঠামো।
সংস্কার ও আর্থিক খাতের উন্নয়ন
বিমা খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সীমা বৃদ্ধি।
NaBFID-এর মাধ্যমে ক্রেডিট এনহান্সমেন্ট সুবিধা।
গ্রামীণ ক্রেডিট স্কোর ব্যবস্থা।
পেনশন খাতের সংস্কার।
বিধিবিধান সংস্কারের জন্য উচ্চস্তরের কমিটি।
রাজ্যগুলির বিনিয়োগবান্ধবতার সূচক প্রকাশ।
জন বিশ্বাস বিল ২.০ (Jan Vishwas Bill 2.0)।
উপসংহার
২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট "সবকা বিকাশ"-এর লক্ষ্যে কৃষি, MSME, বিনিয়োগ ও রপ্তানিকে উন্নয়নের মূল স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে "বিকশিত ভারত" করার পরিকল্পনাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২০২৫ সালের ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেট: বিশদ পর্যালোচনা
২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেন। এবারের বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য ছিল "সবার উন্নয়ন" (সবকা বিকাশ), যা ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
বাজেটের মূল বিষয়সমূহ:
১. আয়কর ও কর ব্যবস্থার সংস্কার
ব্যক্তিগত আয়কর ছাড়:
মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য আয়কর ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য করের হার কিছুটা কমানো হয়েছে, যা খরচ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
নতুন আয়কর আইন আসছে, যা কর ব্যবস্থা সহজ ও সুশৃঙ্খল করবে।
২. কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন
প্রধানমন্ত্রী ধন-ধান্য কৃষি যোজনা: নতুন প্রকল্প, যা কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
কৃষকদের জন্য ঋণ সুবিধা:
৭.৭ কোটি কৃষক, মৎস্যজীবী ও দুগ্ধচাষীদের জন্য কিসান ক্রেডিট কার্ড (KCC)-এর আওতায় ₹৫ লাখ পর্যন্ত স্বল্পসুদে ঋণের সুযোগ।
ডাল উৎপাদনে স্বনির্ভরতা:
তুর, উড়দ ও মাসুর ডালের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ৬ বছরের বিশেষ প্রকল্প।
মাখানা বোর্ড:
বিহারে বিশেষ মাখানা বোর্ড গঠন, যা চাষ ও বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নত করবে।
৩. বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণা
গবেষণা ও উদ্ভাবনে ₹২০,০০০ কোটি বরাদ্দ।
আইআইটি ও আইআইএসসি-তে গবেষণার জন্য ১০,০০০ জনকে প্রধানমন্ত্রী গবেষণা ফেলোশিপ।
ফসলের জাত সংরক্ষণের জন্য দ্বিতীয় জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা।
৪. রপ্তানি ও শিল্প উন্নয়ন
ইলেকট্রনিক্স ও ইভি (ইলেকট্রিক ভেহিকল) খাতে কর ছাড়:
মোবাইল ও ইভি ব্যাটারির উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের উপর শুল্ক ছাড়।
এলইডি/এলসিডি টিভি, টেক্সটাইল শিল্পের যন্ত্রপাতির শুল্ক হ্রাস।
জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত খাতে ১০ বছরের শুল্ক ছাড়।
চামড়া শিল্পে সহায়তা:
ওয়েট ব্লু লেদার আমদানিতে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান।
৫. আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও রাজকোষ ঘাটতি
রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৪.৪% নির্ধারণ।
কর ছাড়ের ফলে ঘাটতি পূরণে পরিকাঠামো খাতে ব্যয় বৃদ্ধি।
৬. পরিকাঠামো ও বিনিয়োগ
বড় আকারের সরকারি বিনিয়োগ:
সড়ক, রেল ও আবাসন খাতে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ।
৭. সামাজিক কল্যাণ ও কর্মসংস্থান
গ্রামীণ কর্মসংস্থান:
মনরেগা প্রকল্পে ₹৮৬০০০ কোটি বরাদ্দ, যা গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে।
গিগ ইকোনমি কর্মীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা:
স্বাস্থ্য ও কল্যাণ সুবিধা বৃদ্ধি।
৮. বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্কার
বিমা শিল্পে বিদেশি বিনিয়োগ সীমা ৭৪% থেকে ১০০%-এ উন্নীত করা হবে।
শক্তি ও নগরোন্নয়ন খাতে নতুন রূপান্তরমূলক নীতি বাস্তবায়ন।
২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট ভারতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কৃষি, প্রযুক্তি, শিল্প ও সামাজিক কল্যাণের সমন্বিত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি বহন করে।
Comments