দেবলীনা হেমব্রম: এক সংগ্রামী আদিবাসী নেত্রীর জীবন ও কর্ম

দেবলীনা হেমব্রম একজন বিশিষ্ট ভারতীয় রাজনীতিবিদ, যিনি পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) [CPI(M)] দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি এক আদিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ছোটবেলা থেকেই সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের দুঃখ-কষ্ট খুব কাছ থেকে দেখেছেন।



ব্যক্তিগত জীবন

দেবলীনা হেমব্রমের স্বামী ছিলেন সুকলাল হেমব্রম (বর্তমানে প্রয়াত)। ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৭.৫ লক্ষ টাকা এবং তাঁর বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা ছিল বলে জানা যায়।

তিনি ১৯৮৮ সালে বাড্ডি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি সমাজসেবার প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যোগ দেন সমাজের উন্নতির জন্য।

রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রাম

দেবলীনা হেমব্রম CPI(M) দলে যোগ দেওয়ার পর দ্রুতই একজন শক্তিশালী নেত্রী হিসেবে উঠে আসেন। দেবলীনা হেমব্রম রানিবাঁধ (এসটি) বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হন—১৯৯৬, ২০০৬, এবং ২০১১ সালে। মন্ত্রী হিসেবে তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 


২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি ঝাড়গ্রাম কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রমের কাছে পরাজিত হন। তবে, ফেব্রুয়ারি ২০১৯-এ একটি সমাবেশে তাঁর দেওয়া একটি জ্বালাময়ী বক্তৃতা ইউটিউবে ভাইরাল হয়, যা তাঁকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলে।

 


২০০৬-২০১১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। এই সময় তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করেন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যান।



ইতিহাস গড়ার পথচলা

২০২৪ সালে, দেবলীনা হেমব্রম পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা জেলা সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি CPI(M)-এর বাঁকুড়া জেলা কমিটির নেতৃত্বে আসেন, যা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এটি CPI(M)-এর মহিলা নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হয়।

প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক হামলার শিকার

দেবলীনা হেমব্রম একজন সাহসী ও নির্ভীক নেত্রী। তিনি বারবার ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছেন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।


২০১২ সালে, তিনি বিধানসভায় চিটফান্ড কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার পর তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়কদের দ্বারা শারীরিকভাবে আক্রমণের শিকার হন। এই ঘটনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।



উত্তরাধিকার ও প্রভাব


দেবলীনা হেমব্রম আদিবাসী সম্প্রদায় ও নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর সংগ্রাম, নেতৃত্ব, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকার তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী করে তুলেছে। তিনি সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির অধিকার রক্ষায় এক অবিস্মরণীয় সংগ্রামী নেত্রী হিসেবে গণ্য হন, যিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার জন্য আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

উপসংহার

দেবলীনা হেমব্রমের সংগ্রামী জীবন এবং আদিবাসী ও নারীদের অধিকার রক্ষায় তাঁর অবদান পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। তাঁর নেতৃত্ব ও সাহসিকতা আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।



Comments

Contact Form

Name

Email *

Message *

Popular posts from this blog

15 Unknown Facts About Jagannath Ratha Yatra You Never Knew

ভারতের রাষ্ট্রপতি-পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা (Qualifications required to be elected for the post of Indian President)

The Lotus Feet of China: A Deep Dive into the Tradition of Foot Binding